স্বদেশ ডেস্ক:
বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন করপোরেশনের (বিএফডিসি) আঙিনায় রয়েছে চলচ্চিত্রের সাতটি সংগঠনের কার্যালয়। সেখানে বসে সংশ্লিষ্ট সংগঠনগুলো কার্যক্রম পরিচালনা করলেও ভাড়াসহ বিভিন্ন বিল পরিশোধ করছে না। দীর্ঘ দিন ধরে এভাবে চলার কারণে বড় অঙ্কের টাকা বকেয়া পড়ে গেছে।
জানা গেছে, ১৯৮৬-৮৭ অর্থবছরের হিসাব অনুযায়ী প্রতিটি কক্ষের ভাড়া ধরা হয় ১ হাজার ৫০০ টাকা। এর সঙ্গে যুক্ত হয় বিদ্যুৎ বিল, পানির বিল, রক্ষণাবেক্ষণ খরচ। এসব খচর দেওয়ার শর্তে কক্ষগুলো বিভিন্ন সমিতিকে ভাড়া দেয় বিএফডিসি। ভাড়াসহ বাড়তি খরচ কয়েক দফায় বেড়েছে। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে সেই টাকা পরিশোধ করছে না সমিতিগুলো। এদের মধ্যে আছে, প্রযোজক পরিবেশক সমিতি, পরিচালক সমিতি, শিল্পী সমিতি, চিত্রগ্রাহক সংস্থা, সিডাপ, ফিল্ম এডিটরস গিল্ড ও বাংলাদেশ চলচ্চিত্র ব্যবস্থাপক সমিতি।
বছরের পর বছর পার হলেও এখন পর্যন্ত তা পরিশোধ করছে না সংগঠগুলো। কেন পরিশোধ করা হচ্ছে না-এ বিষয়ে জানতে চাইলে বেশ কয়েকজন চলচ্চিত্র নেতা উল্টো সুরে বলেন, ‘এমন বিল চাওয়াটাও অন্যায়।’
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত তাদের বকেয়া বিল ছিল ৭৪ লাখ ৫৯ হাজার ৭৫৩ টাকা। গত প্রায় দুই বছরে এর পরিমাণ আরও বেড়েছে, যার মধ্যে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতির বিল রয়েছে ২৬ লাখ টাকা।
এফডিসির জনসংযোগ কর্মকর্তা হিমাদ্রি বড়ুয়া বলেন, ‘সমিতিগুলো কোনোভাবেই বিল পরিশোধ করছে না। প্রতি মাসেই তাদের নোটিশ দেওয়া হয়। এখানে বিদ্যুৎ বিল, ঘর ভাড়া ও পানির বিল আছে। এটার পরিমাণ কোটি খানেক কি না, তা আমি সঠিক বলতে পারব না। আমাদের হিসাব বিভাগ বলতে পারবে।’
এ বিষয়ে এফডিসির হিসাব বিভাগের কর্মকর্তা নিকেশ বড়ুয়া বলেন, ‘আমরা প্রতি মাসেই তাদের নোটিশ পাঠাই। কিন্তু উনারা এ বিষয়ে মনযোগী নন। এটার পরিমাণ ৮০ লাখের মতো হবে।’
সমিতির সভাপতি সোহানুর রহমান সোহান বলেন, ‘এটি মূলত আমাদের কার্যালয় নয়। এটি আবদুল জব্বার খান পাঠাগার। এখানে আমরা বসি পাঠাগারের জন্যই। এর জন্য বিল চাওয়াটাই তো অন্যায়। আর তারা প্রতি মাসে আমাদের নামে বিল পাঠিয়ে যায়।’
বাংলাদেশের প্রথম পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রের পথিকৃৎ আবদুল জব্বার খান। তার সম্মানে এফডিসিতে আবদুল জব্বার খান পাঠাগার নামে একটি পাঠাগার প্রতিষ্ঠিত হয়। তবে সেখানে পরিচালকদের বসার আলাদা কক্ষ ও চেম্বার আছে।
সমিতির সভাপতি সোহানুর রহমান সোহানের এমন দাবির পরিপ্রেক্ষিতে হিমাদ্রি বড়ুয়া বললেন, ‘এটা কেমন কথা! তারা নিয়মিত সেখানে বসেন, মিটিং করেন। এমনকি নির্বাচনও করেন। তাহলে সেটাকে পাঠাগার বলে কেন পাশ কাটানো হচ্ছে? ওখানে বসে এগুলো করেন কেন?’
হিমাদ্রি বড়ুয়ার উত্তরে সমিতির সভাপতি সোহানুর রহমান সোহানের ভাষ্য, ‘পরিচালকরা এখানে আসেন, প্রযোজকদের “পটায়ে” অর্থ বের করেন বলেই এফডিসি চলে। নইলে কিছুই হতো না। আমাদের যদি এ সুবিধা দেওয়া না হয়, তাহলে আমরা কাজ করব না। দেখি, এফডিসি কীভাবে চলে?’
সমিতি ও বিএফডিসির এই দ্বন্দ্ব দীর্ঘদিনের। বিষয়টি নিয়ে এর আগেও কথা বলেছিলেন নায়করাজের ছেলে বাপ্পারাজ। সেখানে সমিতির কার্যালয় থাকাও ঠিক নয় বলেও মন্তব্য করেছিলেন তিনি। তবে সকল সুবিধা ব্যবহার করলেও কোনো কিছুই পরিশোধ করতে রাজি নয় এই সমিতিগুলো।